All text sources from Wikipedia
সুবীর নন্দী
সুবীর নন্দী (১৯ নভেম্বর ১৯৫৩ – ৭ মে ২০১৯) হলেন একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী। তিনি মূলত চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দিয়েই খ্যাতি অর্জন করেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করেন।
তিনি মহানায়ক (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) ও মহুয়া সুন্দরী(২০১৫) চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দিয়ে পাঁচবার এই পুরস্কার লাভ করেন।
সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
প্রাথমিক জীবন
সুবীর নন্দী হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দী পাড়া নামক মহল্লায় এক কায়স্থ সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।।তার নানা বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাদেআলিশা গ্রামে. তার পিতা- সুধাংশু নন্দী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সঙ্গীতপ্রেমী। তার মা পুতুল রানী চমৎকার গান গাইতেন কিন্তু রেডিও বা পেশদারিত্বে আসেন নি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই।বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশবকাল চা বাগানেই কেটেছে। পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাগানেই ছিলেন। চা বাগানে খ্রিস্টান মিশনারিদের একটি স্কুল ছিল, সেখানেই পড়াশোনা করেন। তবে পড়াশোনার অধিকাংশ সময়ই তার কেটেছে হবিগঞ্জ শহরে। হবিগঞ্জ শহরে তাদের একটি বাড়ি ছিল, সেখানে ছিলেন। পড়েছেন হবিগঞ্জ গভঃ হাইস্কুলে। তারপর হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবীর নন্দী সেকেন্ড ইয়ারে পড়তেন।
কর্মজীবন
১৯৬৩ সালে তৃতীয় শ্রেণী থেকেই তিনি গান করতেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি সিলেট বেতারে গান করেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগানে ছিলেন বিদিত লাল দাশ। সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’ -এর গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম। ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ চলচ্চিত্রে। ১৯৮১ সালে তার একক অ্যালবাম “সুবীর নন্দীর গান” ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরি করেছেন।
চলচ্চিত্রের তালিকা
যে গুলোতে তিনি গান 🎶 গেয়েছেন
- সূর্যগ্রহণ (১৯৭৬)
- অশিক্ষিত (১৯৭৮)
- দিন যায় কথা থাকে (১৯৭৯)
- মহানায়ক (১৯৮৪)
- চন্দ্রনাথ (১৯৮৪)
- শুভদা (১৯৮৬)
- পরিণীতা (১৯৮৬)
- রাজলক্ষী শ্রীকান্ত (১৯৮৭)
- রাঙা ভাবী (১৯৮৯)
- পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯১)
- স্নেহ (১৯৯৪)
- বিক্ষোভ (১৯৯৪)
- মায়ের অধিকার (১৯৯৬)
- আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭)
- শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯)
- চন্দ্রকথা (২০০৩)
- মেঘের পরে মেঘ (২০০৪)
- শ্যামল ছায়া (২০০৪)
- হাজার বছর ধরে (২০০৫)
- শত্রু শত্রু খেলা (২০০৭)
- চন্দ্রগ্রহণ (২০১৮)
- আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা (২০০৮)
- অবুঝ বউ (২০১০)
- দুই পুরুষ (২০১১)
- মাটির পিঞ্জিরা (২০১৩)
পুরস্কার ও সম্মাননা
- শিল্পকলায় একুশে পদক (২০১৯)
- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
-
- ১৯৮৪: শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী – মহানায়ক
- ১৯৮৬: শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী – শুভদা
- ১৯৯৯: শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী – শ্রাবণ মেঘের দিন
- ২০০৪: শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী – মেঘের পরে মেঘ
- ২০১৫: শ্রেষ্ঠ পুরুষ কন্ঠশিল্পী – মহুয়া সুন্দরী
- বাচসাস পুরস্কার
-
- ১৯৭৭: সেরা পুরুষ কন্ঠশিল্পী
- ১৯৮৫: সেরা পুরুষ কন্ঠশিল্পী – শুভরাত্রি
- ১৯৮৬: সেরা পুরুষ কন্ঠশিল্পী – শুভদা
১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্লেব্যাকে আসেন সুবীর । ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় আজিজুর রহমান অশিক্ষিত। সেই সিনেমায় সাবিনা ইয়াসমিন আর সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
ধীরে ধীরে তার কণ্ঠের রোমান্টিক আধুনিক গান ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
‘আশা ছিল মনে মনে’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘বন্ধু তোর বরাত নিয়া’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছ’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়’, একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’র মত গানগুলো সুবীর নন্দীকে পৌঁছে দিয়েছে ভক্ত-শ্রোতাদের হৃদয়ে।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আড়াই হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দেওয়া সুবীর নন্দী চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও চারবার বাচসাচ পুরস্কার পেয়েছেন। সংগীতে অবদানের জন্য এ বছরই তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার। (source bdnews24. Com)